বাংলাদেশের মাটিতে বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালি তা আরো একবার দেখল বিশ্ববাসী। টান টান উত্তেজনার ম্যাচে শেষ হাসিটা হাসল বাংলাদেশই। শেষদিকে হাসারাঙ্গা ভয় দেখিয়েছিলেন। ১৪৯ রানে ৭ উইকেট হারানোর পরও হাল ছাড়েননি এই স্পিন অলরাউন্ডার। পাল্টা আক্রমণ করে বাংলাদেশকে ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলেন। ৩৬ বলে মাত্র ৪৭ রান দরকার—এমন সমীকরণ সৃষ্টি করেছিলেন।
৫৯ বলে ৭৪ রান করা এক ব্যাটসম্যান এ অবস্থায় ম্যাচ বের করে আনতে পারতেন অনায়াসে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের চিন্তা দূর করলেন সাইফউদ্দিন। একবার জীবন পাওয়া হাসারাঙ্গাকে আফিফের ক্যাচ বানালেন ৪৪তম ওভারের শেষ বলে। এর পর শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি ছিল।
১১ বল বাকি থাকতে শ্রীলঙ্কা অলআউট হয়েছে। ৩৩ রানে প্রথম ম্যাচ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ দল।
মেহেদি হাসান মিরাজ ৪ উইকেট নিয়ে বড় ধাক্কাটা দিয়েছেন। উইকেট পাওয়ার আনন্দে যোগ দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান আর মোস্তাফিজুর রহমানও। একটু আগে উইকেট তুলে নিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ইনিংসে যে পাঁচ বোলারকে কাজে লাগিয়েছে, তার মধ্যে তাসকিন ছাড়া বাকি চারজনই উইকেটের দেখা পেলেন।
সাইফউদ্দিন একটু আগে দাসুন শানাকাকে বোল্ড করে দিয়েছেন, মাত্র ১৪৯ রানেই সপ্তম উইকেটটি হারায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু অন্যপ্রান্তে থাকা হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ক্রিজে খুঁটি গেড়ে বসেছেন। এরই মধ্যে ৫০ রান করে ফেলেছেন, তা-ও মাত্র ৩২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায়! ক্যারিয়ারের ১৯তম ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ফিফটি পেলেন তিনি। অন্য প্রান্তে ইসুরু উদানা অপরাজিত ১ রানে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় শ্রীলঙ্কার রান ৩৬ ওভারে ৭ উইকেটে ১৬৫। এখনো ৯৩ রান দরকার তাদের। বাংলাদেশের দরকার আর তিনটি উইকেট।
৩০ রানের ওপেনিং জুটির পর লঙ্কানদের ওপর প্রথম আঘাত হানেন মেহেদী হাসান মিরাজ। খুবই সাধারণ একটা বল ছিল সেটি। বোলারের পাশ দিয়ে বের করে মারতে চেয়েছিলেন গুনাতিলকা। বলটি সোজা চলে যায় মিরাজের হাতে। নিজের বলে ক্যাচ নেন এ অফ স্পিনার।
মোস্তাফিজ এরপর বোলিংয়ে এসেই তুলে নেন পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট। বাঁ হাতি পেসারের বলটি ছিল লেংথ বল। কিন্তু নিশাঙ্কা বলের বাউন্সটা বোঝেননি সেভাবে। পুল করতে গিয়ে ব্যাটের মাঝখানে নিতে পারেননি। মিডউইকেটে তাঁর ক্যাচটি ধরেছেন আফিফ হোসেন।
৪১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন কুশল পেরেরা আর কুশল মেন্ডিজ। ৪১ রান যোগ করেন এ দুজন। কিন্তু জুটি ভেঙে ফেলেন সাকিব আল হাসান। দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ১০০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়লেন তিনি। এতে প্রথম নামটি বাঁ হাতি স্পিনার, বর্তমানে নির্বাচক আবদুর রাজ্জাকের।
এর পর থেকে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং আত্মসমর্পণ করে মিরাজের কাছে একে একে তিনি তুলে নেন কুশল পেরেরা, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা আর আসেন বান্দারার। সপ্তম উইকেটে হাসারাঙ্গার সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েছিলেন শানাকা। তাঁকে ফিরিয়ে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন সাইফউদ্দিন। অষ্টম উইকেট জুটিতে অবশ্য এরই মধ্যে ১১ বলে ১৬ রান করে ফেলেছেন হাসারাঙ্গা-উদানা। সবশেষে মুস্তাফিজের বলে দুশমন্ত চামিরার আউটের মধ্যদিয়ে শ্রীলংকার ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে।
কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন ওপেনার লিটন দাস।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দুষ্মন্থ চামিরার অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে ব্যাট ছোঁয়াতে গিয়ে ফার্স্ট স্লিপে থাকা ধঞ্জনয়া ডি সিলভার হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। আউট হওয়ার আগে ৩ বল খেলে কোনো রান করতে পারেননি ডানহাতি ওপেনার।
দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে ব্যাটিংয়ে ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ১৫ রানের ইনিংস খেলে ধরলেন সাজঘরের পথ।
ইনিংসের দ্বাদশ ওভারে লঙ্কান পার্ট-টাইম বোলার গুনাথিকালার স্লোয়ারে হাঁকাতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ তুলে দেন সাকিব। বিদায়ের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৪ বলে ১৫ রান, বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ২টি।
লিটন-সাকিবের বিদায়ের পরও উইকেটে অবিচল থেকে দারুণ ব্যাটিং করছিলেন তামিম ইকবাল। তবে হাফসেঞ্চুরি করে বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার করা ২৩তম ওভারের পঞ্চম বলে তামিম এলবির ফাঁদে পড়ে ফিরে যান। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৭০ বলে ৬টি চার ও এক ছক্কায় ৫২ রান করেন। এটি তার ক্যারিয়ারের ৫১তম হাফসেঞ্চুরি। তবে পরের বলেই স্কুপ করতে গিয়ে মোহাম্মদ মিঠুন শূন্য রানে ফিরে যান।
১০০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশের ইনিংস সামলানোর দায়িত্ব নেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম ফিফটি তুলে নেন মুশফিক। তবে সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও বঞ্চিত হন মি. ডিপেন্ডেবল। লক্ষণ সান্দাকানের বলে আউট হওয়ার আগে ৮৭ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৮৪ করেন তিনি।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ১২২ বলে ১০৯ রান করেন মুশফিক। যেখানে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম হা্ফসেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদউল্লাহ। ডি সিলভার তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে ৭৬ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ করেন তিনি।
শেষদিকে আফিফ হোসেন ২৭ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন।
অবশেষে পূর্ণ ১০ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ল বাংলাদেশ। শুভকামনা বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম।