স্বপ্নের মেট্রোরেলের চাকা ঘুরলো অবশেষে ঢাকার বুকে। ডিপোর ভেতরে আনুষ্ঠানিকভাবে চলাচল শুরু করল দেশের প্রথম মেট্রোরেল। গতকাল রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপোতে প্রথম মেট্রো ট্রেন সেট বসানো হলো রেলট্র্যাকে। ট্রেন চলাচলের শুরুর এই প্রক্রিয়াটিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ বলছে, পারফরম্যান্স টেস্ট। ডিপোর ভেতরে ট্রেনটির পারফরম্যান্স টেস্ট ও স্পিড টেস্ট শেষ হওয়ার পর আগামী আগস্টে ট্রেনটি ভায়াডাক্টের ওপর তোলা হবে।
মেট্রোরেলের প্রথম ট্রেনটি পরিদর্শন ও পারফেরম্যান্স কার্যক্রম উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে ওয়ার্কশপ থেকে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার গতিতে ট্রেনটি আসে কোচ আনলোডিং জোনে। এর মাধ্যমে মেট্রোরেলের ট্রেনটি প্রথমবারের মতো জন সম্মুখে আনা হলো।
মন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ট্রেনটির চলাচল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। ট্রেনটি আনলোডিং জোনে এসে দাঁড়ালে ট্রেনে ওঠেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিকসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
এ সময় বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়াীমী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রী বলেন, প্রথম পর্যায়ের নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও এলাকার অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। তিনি বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও এলাকা থেকে মতিঝিল এলাকার অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৫৯ দশমিক সাত আট শতাংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম, রোলিং স্টক ও ডিপো ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৫৪ দশমিক চার শূন্য শতাংশ।
জাপান থেকে গত ২৩ এপ্রিল উত্তরা ডিপোতে এসে পৌঁছে ট্রেনসেট। বর্তমানে প্রথম মেট্রো ট্রেনসেটের ডিপোতে ফাংশনাল টেস্ট চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় তিন মাস পর অর্থাৎ চলতি বছরের আগস্ট মাসে ভায়াডাক্টের উপরে মেইন লাইনে পারফরম্যান্স টেস্ট শুরু করা হবে। ভায়াডাক্টের উপরে পারফরম্যান্স টেস্ট সম্পন্ন হওয়ার পর করা হবে সমন্বিত পরীক্ষা। তারপর ট্রায়াল রান। এর আগে পর্যায়ক্রমে অনেক সতর্কতার সঙ্গে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় মেট্রোরেলের ডিপোর রেলওয়ে ট্র্যাকে বসানো হয় ছয়টি মেট্রোরেল কোচ। মেকানিক্যাল-ইলেকট্রিক্যাল, ওয়াশিংসহ প্রতিটি কোচের ১৯ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর পরেই কোচগুলো লাইনে তোলা হয়। এ কাজের জন্য ইতালি থেকে এক ধরনের যন্ত্র আনা হয়েছে বলে জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
পরে ধীরে ধীরে মেট্রোরেলের ডিপো থেকে বের করা হয় স্বপ্নের লাল সবুজের মেট্রোরেল কোচগুলো। এসময় করতালির মাধ্যমে কোচগুলোকে অভিবাদন জানানো হয়। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের সার্বিক গড় অগ্রগতি প্রায় ৬৪ শতাংশ। প্রথম পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৮৫ শতাংশ। দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মাণের জন্য নির্ধারিত আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের পূর্ত কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশ এবং ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল সিস্টেম এবং রোলিং স্টক ও ডিপো ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ কাজের সমন্বিত অগ্রগতি ৫৫ শতাংশ।
ডিপোর ভূমি উন্নয়ন কাজ নির্ধারিত সময়ের নয় মাস আগে সমাপ্ত হয়েছে। এতে সরকারের টাকা সাশ্রয় হয়েছে ৭০ কোটি ৫৮ লাখ। ডিপোর পূর্ত কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ। মোট ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ১৪ দশমিক ৪১ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন সম্পন্ন হয়েছে। এমআরটি লাইন-৬ এর সব স্টেশনের নির্মাণকাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান। ডিপো অভ্যন্তরে রেললাইন স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্টের উপর স্থাপন করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রেললাইন। ভায়াডাক্টের উপরে ওভারহেড ক্যাটেনারি ওয়্যার স্থাপনের কাজ চলছে ডিপোর অভ্যন্তরে ও আগারগাঁও পর্যন্ত।