দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা এক হাজার ছাড়াল। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি এই মৃত্যুগুলোর জন্য আর কোনো রোগ দায়ী ছিল কি না, তাঁদের বয়স কত ছিল, আক্রান্ত হওয়ার পর কোন ধরনের লক্ষণ প্রথম প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল—এসব তথ্য পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা এক হাজার ছাড়াল। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি এই মৃত্যুগুলোর জন্য আর কোনো রোগ দায়ী ছিল কি না, তাঁদের বয়স কত ছিল, আক্রান্ত হওয়ার পর কোন ধরনের লক্ষণ প্রথম প্রথম প্রকাশ পেয়েছিল—এসব তথ্য পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রোগীর মৃত্যুর পর রোগ নিয়ে এমন পর্যালোচনা হয়। তবে করোনার ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যুর পর এ ধরনের পর্যালোচনা করা তুলনামূলকভাবে কঠিন। কারণ, রোগটি খুব ছোঁয়াচে, পর্যালোচনা করতে গিয়ে করোনা অন্যের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার শঙ্কা থাকে। তাই দ্রুত মৃত ব্যক্তির সৎকার করা হয়।
এ ক্ষেত্রে পর্যালোচনার কাজটি রোগী ভর্তির সময়ই করে রাখতে হবে। জানতে হবে, আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর আগে থেকেই কোনো সমস্যা ছিল কি না, দীর্ঘমেয়াদি কোনো রোগ ছিল কি-না এবং করোনার কোন উপসর্গ বেশি দেখা দিয়েছে। ফলে ভর্তি হওয়া রোগীদের কেউ মারা গেলে সহজেই তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে।
তবে শুধু মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করলেই হবে না, সেটি প্রকাশও করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসক দুই পক্ষই উপকৃত হবে। পর্যালোচনা থেকে সাধারণ মানুষ জানতে পারবে, কোন ধরনের রোগ থাকলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকে। মানুষ কি শুধু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণেই মারা যাচ্ছে, নাকি তার আর কোনো রোগ ছিল। এসব তথ্য জানা থাকলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ আরও বেশি সচেতন হবেন।
বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। যাঁদের কিডনি ও হার্টের সমস্যা আছে, আগে স্ট্রোক হয়েছিল, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে, ক্যানসারে আক্রান্ত বা কেমো নিচ্ছেন, তাঁদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে কম বয়সীরাও আছে। কম বসয়ীদের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ-যুবকদের মধ্যে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনাও বেশি। আমার ধারণা, অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মধ্যে যারা একটু বিশৃঙ্খল জীবনযাপন করে, সামাজিক দূরত্ব না মেনে আড্ডা দেয়, অপ্রয়োজনে ঘুরে বেড়ায়, তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যারা অতিরিক্ত ধূমপান বা মদ্যপান করে, অন্য কোনো নেশায় আসক্ত, তাদের ঝুঁকিও বেশি।
আমাদের দেশে অল্প বয়সী যারা মারা গেল, তাদের মৃত্যুটি পর্যালোচনা করা উচিত। পর্যালোচনায় জানা যেত, তাদের অন্য কোনো রোগ ছিল কি না, অতিরিক্ত ধূমপানের কারণে ফুসফুস আগে থেকেই দুর্বল ছিল না, নাকি শুধু শ্বাসকষ্টের কারণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এসব তথ্য জানা থাকলে অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মধ্যে যারা একটু বিশৃঙ্খল জীবনযাপন করছে, তার শৃঙ্খলাবদ্ধ হওয়ার তাগিদ পেত। অন্যদিকে করোনা চিকিৎসায় জড়িতরাও জানতে পারবেন কোন ধরনের রোগী সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, চিকিৎসার পদ্ধতি সম্পর্কেও তাঁরা একটি ধারণা পাবেন, এতে রোগীর চিকিৎসা করতে সুবিধা হবে।
এ বি এম আবদুল্লাহ
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক