জান্নাত আরা সংবাদ সম্মেলনে বড় ভাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পেস্ট কন্ট্রোল অফিসার আসিফ ইকবাল প্রিন্স, ভাবি খুলনার রাজবাড়ির বালিয়াকান্দির ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা নাসরিন এবং মা হাওয়া নুর বেগমের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ইউএনও ভাবি, ডিএসসিসি কর্মকর্তা ভাই ও মায়ের বিরুদ্ধে বাবার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, পৈত্রিক সম্পদ থেকে বেদখল করা, বাবার রেখে যাওয়া পোস্ট অফিসের পাঁচ লাখ টাকার পাস বই না দেওয়াসহ বিয়ের সোনার অলঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ করেন জান্নাত। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে পরীক্ষার সনদ ও নম্বরপত্র, ব্যক্তিগত টাকা-পয়সা ও মালামাল আটকে রেখে দেওয়ারও অভিযোগ করেন জান্নাত।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জান্নাত আরা বলেন, আমার বাবা পৈত্রিক ওয়ারিশসূত্রে বহু সম্পত্তি পেয়েছেন। এছাড়া বাবা নিজ অর্থে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় দাদার বাড়িতে আব্দুস সালাম কলেজ নির্মাণ করেন। বাবা মারা যাওয়ার আগে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বহু টাকা রেখে গেছেন এবং আমার নামে বরিশাল পোস্ট অফিসে তিন বছর মেয়াদী পাঁচ লাখ টাকা রেখে যান।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৭ আগস্ট বরিশাল নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সাজ্জাদ উল আলমের সঙ্গে উভয় পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার জন্য বড় ভাই ও ভাবি চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আমি অসুস্থ থাকায় স্বামীর বাড়িতে যেতে পারিনি। তবে এসময় আমার স্বামী নিয়মিত ভরণ-পোষণ, ওষুধপত্র ও আনুসঙ্গিক অন্যান্য খরচ বহন করেছেন। এক পর্যায়ে আমার মা আমাকে বাড়ি ছাড়ার জন্য চাপ দেন। এরপরই আমি মা, ভাই ও ভাবিকে পোস্ট অফিসে বাবার রেখে যাওয়া ৫ লাখ টাকার পাস বই এবং বাবার নির্মিত কলেজ ও বাপ-দাদার সম্পত্তির অংশ দাবি করি। এর প্রতিউত্তরে তারা জানান, বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আমি পৈত্রিক সম্পত্তির কিছুই পাবো না। এ সময় তারা বাড়ি ছেড়ে না গেলে আমার স্বামীর ক্ষতি হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন।
জান্নাত আরা বলেন, এরপরও বাসা থেকে না নামায় মা, বড় ভাই ও ভাবির সঙ্গে সম্পত্তি নিয়ে প্রতিনিয়ত ঝগড়া হতো। সর্বশেষ গত ২৩ মে ডাক্তার দেখাতে বাসার বাইরে বের হলে মা তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাসার গেট তালাবদ্ধ করে দেন। কিছুক্ষণ পর আমার স্বামী হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আমাদের বাড়িতে আসলে মা কাউনিয়া থানা পুলিশকে খবর দেয়। থানার এএসআই মো. জিহাদ তার ফোর্স নিয়ে আমাদের বাসায় উপস্থিত হন। এসময় আমার ভাবি ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা নাসরিনের সঙ্গে মায়ের মোবাইলফোনে দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন। কথা শেষে এএসআই জিহাদ আমাকে ও আমার স্বামীকে বাসা ছেড়ে চলে না গেলে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেন।
পরে বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর ও বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই। পরবর্তীতে আমি পুনরায় বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই মা বাড়ির সব গেটে তালা দিয়ে রেখেছেন। পরে বিষয়টি পুনরায় থানা পুলিশ ও কাউন্সিলরকে অবহিত করি।
তিনি দাবি করেন, ঘটনার পর থেকে আমি ও আমার স্বামী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমাকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটানোর ভয় দেখাচ্ছেন ভাই ও ভাবি। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে বিষয়টি পারিবারিক ও তার সেইভাবেই সমাধানের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও আম্বিয়া সুলতানা নাসরিন। তিনি বলেন, এটি আমার স্বামীর পারিবারিক বিষয়। যা পারিবারিকভাবেই সমাধানের চেষ্টা চলছে। বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। আর যে বাড়ি নিয়ে অভিযোগ, সেটি আমার শাশুড়ির, তিনিই ওই বাড়ির বিষয়ে সব সিদ্ধান্ত নেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর মর্তুজা আবেদীন বলেন, বিষয়টি শোনার পর উভয় পক্ষকে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চালিয়েছি। তবে কেউ রাজি না থাকায়, এগোতে পারছি না। বর্তমানে জান্নাতের যে গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র আটকে রাখার অভিযোগ, সেটি তার পরিবারের সদস্যদের জানানো হয়েছে। এগুলো দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তারা।