বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও এপ্রিলে এসে তা থমকে দাঁড়িয়েছে। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে পর্যুদস্ত ভারত সব ধরনের ভ্যাকসিন রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলশ্রুতিতে সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশর অগ্রিম কেনা তিন কোটি ডোজ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা (কোভিশিল্ড) ভ্যাকসিন সময়মত আসছে না। এ পর্যন্ত সেরাম থেকে পাওয়া গেছে ৭০ লাখ ডোজ, আর উপহার হিসেবে ভারত সরকার দিয়েছে ৩২ লাখ ডোজ। সব মিলিয়ে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি এক কোটি দুই লাখ ডোজ। আগামী জুলাইয়ের আগে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
ভ্যাকসিন স্বল্পতার কারণে সরকার প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করেছে। এখন দেওয়া হচ্ছে শুধু দ্বিতীয় ডোজ। যে পরিমাণ ভ্যাকসিন হাতে আছে তাতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ সময়মত দেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পূর্ণ সুরক্ষা পেতে দ্বিতীয় ডোজটি প্রথম ডোজের ১২ সপ্তাহের ভেতরে নিতে হবে। এর পরে নিলে ভ্যাকসিন সুরক্ষা কিছুটা কমে যেতে পারে।
সরকার এখন আপ্রাণ চেষ্টা করছে সেরাম ছাড়াও অন্য কোম্পানির কাছ থেকে ভ্যাকসিন ক্রয়ের। এরই মধ্যে দেশের ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্ম কোম্পানির ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার নীতিগতভাবে স্পুটনিক-ভি ও সিনোফার্ম টিকা দেশে উৎপাদনের অনুমোদনও দিয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যেই উপহার হিসেবে সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, স্পুটনিক-ভি বা সিনোফার্ম টিকা কি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সঙ্গে ‘মিক্স এন্ড ম্যাচ’ পদ্ধতিতে দেওয়া যাবে? অর্থাৎ যারা কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ পেয়েছেন তাদের কি দ্বিতীয় ডোজ স্পুটনিক-ভি বা সিনোফার্ম দেওয়া যাবে? দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে এই ভ্যাকসিনগুলো কতটা কার্যকর এবং নিরাপদ?
স্পুটনিক-ভি বা সিনোফার্মের টিকা এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়নি। এ দুটো ভ্যাকসিন ইউরোপের রেগুলেটর ইএমএ, যুক্তরাজ্যের রেগুলেটর এমএইচআরএ অথবা যুক্তরাষ্ট্রের রেগুলেটর এফডিএ কারোরই অনুমোদন পায়নি। ভারত সম্প্রতি স্পুটনিক-ভি কে তাদের দেশে ব্যাবহারের অনুমোদন দিয়েছে।
একটা নতুন ওষুধ বা ভ্যাকসিন কতটুকু নিরাপদ এবং কার্যকর তা নিশ্চিত করে বিভিন্ন দেশের মান নিয়ন্ত্রক রেগুলেটর কমিটি। এই অনুমোদন প্রক্রিয়াটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। এর জন্য দরকার এক্সপার্ট প্যানেল যারা ভ্যাকসিনের সকল ল্যাবরেটরি এবং ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ডাটা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই বাছাই করে তারপর ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এর জন্য দরকার কমপক্ষে তিন/চার সপ্তাহ। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে কিভাবে এত দ্রুত ভ্যাকসিন দুটোকে অনুমোদন দেওয়া হলো? বাংলাদেশে কি আগে এভাবে কোনো ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে যেগুলো ডব্লিউএইচও বা এফডিএ দ্বারা পূর্ব-অনুমোদিত নয়?
স্পুটনিক-ভি কতটা কার্যকর এবং নিরাপদ?
তবে, ফেইজ-৩ ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনটির শুধু ফ্রোজেন বা হিমায়িত ফর্মুলেশনটি পরীক্ষা করা হয়েছে। ফ্রোজেন ভ্যাকসিনের সংরক্ষণ তাপমাত্রা মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই ভ্যাকসিনটির আরেকটি ফর্মুলেশন হচ্ছে পাউডার বা লায়োফিলাইজড ফর্ম, যা সংরক্ষণ করা যায় ৪-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাধারণ রেফ্রিজারেটরে। এই ফর্মুলেশনটি ফেইজ-৩ ট্রায়ালে ব্যবহার করা হয়নি।
অবশ্য, পূর্বের ফেইজ-১ ও ২ ট্রায়ালে দুটো ফর্মুলেশনই শতভাগ ভলান্টিয়ারের রক্তে পর্যাপ্ত নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি তৈরি করতে এবং টি-সেল রেসপন্স ঘটাতে সক্ষম হয়েছে (ল্যানসেট, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০)। এ থেকে অনুমান করা যায়, হয়ত পাউডার ফর্মের ভ্যাকসিনটিরও কার্যকারিতা হবে ৯২ শতাংশ। তবে এর পক্ষে তথ্য-প্রমাণ থাকা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশে স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনটির উৎপাদন এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা বিবেচনায় রাখা দরকার।
এই মুহূর্তে এই ভ্যাকসিনটি রোলিং রিভিউ করছে ইউরোপিয়ান রেগুলেটর ইএমএ। তারা ভ্যাকসিনের কোন ফর্মুলেশনটির অনুমোদন দেয়, সেটাও দেখার বিষয়। রাশিয়া ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কোন ফর্মুলেশনটি ব্যবহৃত হচ্ছে এবং পাউডার ফর্ম ভ্যাকসিনটি কেমন কাজ করছে সেটাও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। কারণ ভ্যাকসিনের এই লায়োফিলাইজড পাউডার ফর্মুলেশনটিই বাংলাদেশের কোল্ডচেইনের সঙ্গে বেশি মানানসই।
রাশিয়ার বিখ্যাত গ্যামালেয়া ইন্সটিটিউটের উৎপাদিত এই ভ্যাকসিনটি একটি হেটারোজেনাস অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজে দুটি ভিন্ন প্রজাতির হিউমেন অ্যাডিনোভাইরাস ব্যাবহার করা হয়েছে। প্রথম ডোজে ব্যাবহার করা হয়েছে অ্যাড-২৬ (Ad26) নামক বিরল প্রজাতির অ্যাডিনোভাইরাস এবং দ্বিতীয় ডোজে ব্যবহার করা হয়েছে সাধারণ অ্যাড-৫ (Ad5) জাতের অ্যাডিনোভাইরাস।
ডিএনএ রিকম্বিনেন্ট টেকনোলজির মাধ্যমে এই অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টরগুলোর মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে করোনাভাইরাসের একটি জিন যা স্পাইক প্রোটিন তৈরিতে সক্ষম। এই ভেক্টর ভাইরাস টিকার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে স্পাইক প্রোটিন তৈরি করে যা করোনাভাইরাসের বিপরীতে ইমিউন রেসপন্স ঘটিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর পদ্ধতিতে তৈরি অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলো হচ্ছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, জনসন এন্ড জনসন এবং চীনের ক্যানসিনোবায়ো ভ্যাকসিন। তবে স্পুটনিক ছাড়া বাকি সবগুলো ভ্যাকসিনে মাত্র একটি ভেক্টর ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ব্যবহার করেছে শিম্পাঞ্জির অ্যাডিনোভাইরাস। অন্যদিকে, জনসন এন্ড জনসন এবং ক্যানসিনোবায়োতে ব্যবহার করা হয়েছে যথাক্রমে অ্যাড-২৬ এবং অ্যাড-৫ হিউমেন অ্যাডিনোভাইরাস।
স্পুটনিক-ভি কি অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের সঙ্গে মিক্স এন্ড ম্যাচ করে ব্যবহার করা যাবে?
ভ্যাকসিনের দুটি ডোজের একটি স্পুটনিক-ভি এবং আরেকটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা দিয়ে দেওয়া যাবে কিনা, এর উপর একটি ফেইজ-১ ও ২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হওয়ার কথা ছিল রাশিয়াতে এ বছর ৩০ মার্চ যা শেষ হওয়ার কথা অক্টোবরে। তবে ক্লিনিক্যালট্রায়ালস ডট গভ ওয়েবসাইটের তথ্যমতে ট্রায়ালটি এখনও শুরু হয়নি। সুতরাং ট্রায়াল সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত বলা যাবে না যে এই দুটি ভ্যাকসিনের ‘মিক্স এন্ড ম্যাচ’ কতটুকু কার্যকরী হবে অথবা এতে কোনো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে কিনা। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা যেহেতু দুটি ভ্যাক্সিনই একই প্লাটফর্মের তাই মিক্স এন্ড ম্যাচ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে কার্যকরী হতে পারে।
চীনের সিনোফার্ম ভ্যাকসিন কতটা কার্যকরী?
সিনোফার্মের কোভিড ভ্যাকসিনটি একটি কিল্ড বা ইনেক্টিভেটেড ভ্যাকসিন। এই পদ্ধতিতে করোনা ভাইরাসকে কেমিক্যালের মাধ্যমে নিষ্ক্রিয় করে ভ্যাকসিন হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। এটি ভ্যাকসিন তৈরির একটি সনাতন পদ্ধতি। চীনের আরেকটি ভ্যাকসিন সিনোভ্যাক, ভারতের কোভ্যাক্সিন এবং ফ্রান্সের ভ্যালনেভা এই ধরনের কিল্ড কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।
সিনোফার্ম চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় দুটি কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করছে। একটি বেইজিং ইন্সটিটিউটে এবং আরেকটি উহানে। বাংলাদেশ যেটি ক্রয় করছে সেটি বেইজিংয়ের। সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের ফেইজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল এখনও কোনো জার্নালে প্রকাশিত হয়নি। তাই এই ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য বিস্তারিত জানা যায় না। সিনোফার্ম ভ্যাকসিনের ফেইজ-৩ ট্রায়াল হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, বাহরাইন, পেরু এবং মরক্কোতে।
সিনোফার্মের প্রেস রিলিজ অনুযায়ী দুটি ডোজে দেওয়ায় ভ্যাকসিনটির (বেইজিং ইন্সটিটিউট) কার্যকারিতা ৭৯ শতাংশ। অন্যদিকে ভ্যাকসিনের উহান ভার্সনের কার্যকারিতা ৭২ শতাংশ। কোনো ট্রায়ালেই ভ্যাকসিনের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়নি (বিএমজে, ৯ এপ্রিল ২০২১)। সিনোফার্ম ভ্যাকসিন এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আগামী সপ্তাহেই হয়তো ফলাফল জানা যাবে।
এর আগে, সিনোফার্ম তাদের প্রথম ভ্যাকসিনটির ফেইজ-১ ও ২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালায় যথাক্রমে ৯৬ এবং ২২৪ জন ভলান্টিয়ারের উপর। দুই ডোজ ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৪ দিন পরেই ৮৬ শতাংশ ভলান্টিয়ারের রক্তে তৈরি হয় পর্যাপ্ত নিউট্রালাইজিং এন্টিবডি। তবে এই ভ্যাকসিনটি টি-সেল রেসপন্স ঘটাতে সক্ষম হয়নি (জেএএমএ জার্নাল, ১৩ আগস্ট ২০২০)। এ কারণেই এই ভ্যাকসিনে তৈরি ইমিউনিটির স্থায়িত্ব নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ আগামী দুই সপ্তাহের ভেতরে পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্ম ভ্যাকসিন পেতে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই ভ্যাকসিনটি কি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের সঙ্গে মিক্স এন্ড ম্যাচ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা যাবে? অর্থাৎ যারা প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিয়েছেন, তারা কি দ্বিতীয় ডোজে সিনোফার্ম ভ্যাকসিন নিতে পারবেন? উত্তর এখনো অজানা। ট্রায়াল ছাড়া এটা জানা যাবে না। সিনোফার্ম এবং কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দুটো সম্পূর্ণ আলাদা প্লাটফর্মের ভ্যাকসিন। একটি কিল্ড ভ্যাকসিন, আরেকটি লাইভ অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন। এদের কাজ এবং ইমিনোজেনিক রেসপন্স ভিন্ন। যুক্তরাজ্যে এখন অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন এর সঙ্গে এমআরএনএ ভ্যাকসিনের ‘মিক্স এন্ড ম্যাচ’ ট্রায়াল চলছে।
শেষকথা
স্পুটনিক-ভি ভ্যাকসিনটি আধুনিক এবং প্রতি ডোজের মূল্য ১০ ডলার। এই ভ্যাকসিনটি ৬০টির বেশি দেশে অনুমোদন পেয়েছে। খুব শিগগির হয়তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়ে যাবে। এই ভ্যাকসিনের পাউডার ফরমুলেশনটা হতে পারে আমাদের দেশের জন্য উপযুক্ত একটি ভ্যাকসিন। তবে এর জটিল প্রস্তুত প্রণালীর বাংলাদেশে এর উৎপাদনের জন্য কতটুকু সহায়ক তা ভেবে দেখার দরকার আছে।
অন্যদিকে সিনোফার্ম ভ্যাকসিনটি সনাতন এবং সহজেই দেশের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে উৎপাদন করা সম্ভব। এই ভ্যাকসিনটির ফেইজ-৩ ট্রায়ালের ফলাফল এখনও অপ্রকাশিত। তাই ভ্যাকসিনটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের পরেই দেশের মানুষের উপর প্রয়োগ করা উচিত। এই ভ্যাকসিনটির প্রতি ডোজের দাম ৩৫ ডলার। দেশে উৎপাদন করতে পারলে হয়তো দাম কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে।
ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম: এমবিবিএস, এমএসসি, পিএইচডি, সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট, শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাজ্য