করোনা মোকাবেলার শুরু থেকেই ভুল পথে হাঁটছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নীতিনির্ধারকরা মনে করেন যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড এবং বক্তব্যের কারণেই বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি এই অবস্থায় এসেছে। শুরু থেকেই তাঁরা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে, ভুল পথে হাঁটছে এবং সঙ্কট সমাধানের কোন দিকনির্দেশনা দিতে পারছে না। এইবাস্তবতায় সরকারের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ব্যাপক পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে বলেও একটি দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
গতকাল দীর্ঘদিন পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদ মিডিয়া ব্রিফিংয়ে আসেন। ব্রিফিংয়ে এসেই তিনি এক বিভ্রান্তিকর বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন যে, আগামী ২-৩ বছর কিংবা তাঁর থেকেও বেশি সময় আমাদের করোনার সঙ্গে বসবাস করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই বক্তব্যকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দায়িত্বজ্ঞানহীন বলেছেন এবং এটাকে অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। শুধু তাই নয়, এই বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন সরকারের নীতিনির্ধারক মহল। এর প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যে, বিশ্বের একাধিক দেশে ইতিমধ্যেই করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের কাজ চলছে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক মহল থেকে বলা হচ্ছে যে, আগামী কয়েক মাসে মধ্যে, সর্বোচ্চ জানুয়ারির মধ্যেই ভ্যাকসিন আসবে।
সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন যে, ভ্যাকসিনের দিকেই এখন সরকারের নজর দেওয়া উচিত।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উচিত বিশ্বের কোথায় ভ্যাকসিন হচ্ছে এবং কিভাবে সেই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা। কারণ প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে, ভ্যাকসিন আসা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কাজেই পৃথিবীতে ভ্যাকসিন আসার পর যেন আমরা পিছিয়ে না পড়ি, দ্রুতই যেন আমরা ভ্যাকসিন পাই সেটাই হলো এখন আমাদের অগ্রাধিকার।
কিন্তু গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ তাঁর দেওয়া বক্তব্যে ভ্যাকসিনের কথাটি না বলে মানুষের মাঝে এক ধরণের আতঙ্ক এবং হতাশা তৈরি করেছে। এটা অমার্জনীয় অপরাধ বলে মনে করছেন সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বক্তব্যে অসন্তুষ্ট বলে সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
শুধু এবারই প্রথম নয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক করোনা সঙ্কটের শুরু থেকেই একের পর এক বিভ্রান্তিকর ভুল তথ্য দিচ্ছেন এবং জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে যখন করোনার সংক্রমণ শুরু হলো তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সীমিত পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা সংক্রমণকে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সেই সময় যদি অনেক বেশি হারে পরীক্ষা হতো তাহলে পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর হতো না। এরপরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে করোনার সংক্রমণ ১ লাখের বেশি হবেনা। এই তথ্যও ছিল বিভ্রান্তিকর এবং এই প্রক্ষেপণের মাঝে কোন দায়িত্বশীলতা ছিলোনা বলেও মনে করেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
এরপরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হলো যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে করোনা চিকিৎসা করতে হবে। অন্তত ৫০ শয্যার যেকোন হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসা দিতে হবে। এটা করে আরেক দফা ভুল পথে হাঁটল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রত্যেকটি হাসপাতালের জন্য পৃথক কোভিড-নন কোভিড চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এভাবে ঢালাওভাবে চিকিৎসা করতে দেওয়ার কারণে আরেক ধরণের সমস্যা তৈরি হলো। এছাড়া যখন করোনা শুরু হলো, তখনই করোনা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের সুরক্ষার কথা বলা হলো।স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যে কেনাকাটা করা হলো সেই কেনাকাটায় অস্বচ্ছতা পাওয়া গেল। এক ‘এন-৯৫’ মাস্ক নিয়েই কেলেঙ্কারি ঘটে গেল, যে কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নিজেই। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দেখে মনে হচ্ছে যে, দায়সারা গোছের কাজ করছেন এবং ভুল পথে হাঁটছেন।
সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারক মনে করছেন যে, এই ভুলগুলো অমার্জনীয় এবং এখনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান না করলে এই ভুলের কারণে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হবে।