বিশ্বে দিন দিন জলবায়ু পরিবর্তন একটি চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলি সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। তারই ধারাবাহিকতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে মরু এলাকায় কোটি কোটি গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে চীন। দেশটির গোবি মরুভূমি ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় হাজার হাজার একর জমিতে শুরু হয়েছে গাছ রোপন। প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলে ভয়াবহ ধূলিঝড় থেকে রাজধানী বেইজিংকে রক্ষার অংশ হিসেবেই এমন পরিকল্পনা বলে মনে করা হচ্ছে।
যতদূর চোখ যায়, শুধু ধু ধু মরুভূমি। মঙ্গোলিয়া থেকে চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এই মরুভূমিতে মানুষের বসবাস থাকলেও নেই সবুজের কোনো চিহ্ন। এবার রুক্ষ মরুর শত শত মাইল জুড়ে কোটি কোটি গাছ লাগানো শুরু করেছে চীন। প্রতি বছর মার্চ এবং এপ্রিলে ধুলিঝড়ের মুখে পড়ে চীন। গোবি এবং উত্তর-পশ্চিাঞ্চলীয় মরু এলাকা থেকে উড়ে আসা ধূলিঝড়ে আচ্ছন্ন হয় হাজার মাইল দূরের রাজধানী শহর বেইজিং।
দীর্ঘদিনের এই দুর্ভোগ থেকে রক্ষায় এবার মুক্ত এলাকায় সবুজের বেষ্টনী গড়ে তোলার উদ্যোগ চীন সরকারের। যদিও তাদের দাবি, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার উপায় হিসেবে এই বনায়ন কার্যক্রম। তারা জানান, এখানে আগে কখনো একটা ঘাসও জন্মায়নি। শুধু বালির টিলা ছিল। ঝড় আসলে গোটা এলাকা বালিতে ঢেকে যায়। এর ফলে রাস্তাঘাট ও ফসলী জমি সব বালির নিচে চলে যায়। বহুদিন ধরে সংঘাত করে যাচ্ছি এই বালির সঙ্গে। আমার মা তো বলতেন, যখন এই এলাকায় গাছ লাগানো হবে, তখনই আবার এই এলাকায় শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারব। এখন এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। ক্ষতিগ্রস্ত এক মহিলা বলেন, গতবছর ক্ষরায় এই এলাকার অনেক ভেড়া মারা গেছে। এই অবস্থা শুধু আমার নয়। অনেকেরই এই অবস্থা হয়েছে। কারণ, গতবছরের মাঝামাঝি থেকে এখন পর্যন্ত একফোঁটা বৃষ্টিও পড়েনি।
বহুবছর ধরে মরুভূমি ও জলাভূমিকে কৃষিভূমিতে পরিণত করার জন্য কাজ করছে বেইজিং। পরিবেশবিদরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব ঠেকাতে গাছ লাগানোর পাশাপাশি কমাতে হবে কার্বন নিঃসরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণেই বছর বছর মরু অঞ্চলটিতে ধূলিঝড় হয়। চরম উঞ্চ তাপমাত্রা, খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে এটি কোনোক্রমেই আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শুধু গাছ লাগিয়ে এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। বিপর্যয় ঠেকাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে। ২০২৫ সালের মধ্যে চীনের মরুভূমি ২৩ থেকে ২৪ দশমিক বা ১ শতাংশ বাড়াতে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। চীনের এ প্রকল্প সমগ্র এশিয়াকে জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাব হতে রক্ষা করবে বলে বিশেষজ্ঞদের মত।